একটি পতাকার জন্য পরিবার পরিজনের মায়া-মমতা উপেক্ষা করে ৩০লক্ষ শহীদের তাজা প্রান আর আর দুই লাখেরও বেশী নারী নির্যাতনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার এই দেশে মোরা একটি ফুলকে বাচাঁব বলে… কিংবা একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা তুমি সারা বিশ্বে আমার অহংকার গানগুলো শুনলে অন্যরকম ভাললাগার অনুভূতি হয়।এই গানগুলি আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয় আমার মা একটি নয় আমার মা দুটো।যে মা আমাকে এই পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে সেই মায়ের ভালভাবে বেচেঁ থাকার জন্য প্রায় ৩০লক্ষ মানুষ নিজেদের সবটুকু দিয়ে এমন একটি মা দিয়ে গিয়েছে কোটি কোটি মানুষকে যে মায়ের বুকে উর্দুতে নয় বাংলায় কথা বলতে পারি,গর্ব করে বলতে পারি আমরা সেই জাতি যে জাতি তাদের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে;আমরা সেই জাতি যে জাতির বীরেরা ,বীরঙ্গনারা শুধু আমাদের মুখের ভাষায় দিয়ে যায়নি আমাদের জন্য স্বাধীন একটি দেশও দিয়ে গিয়েছে,আমাদের পতাকার চারপাশের সবুজের মাঝের লাল বৃওটি সারা পৃথিবীর মানুষগুলোকে এই বার্তা পৌছে দেয় বাঙালী জাতি বীরের জাতি ।
যে লাল-সবুজের পতাকা আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় আমরা বাংলাদেশী সেই পতাকার সম্মান আমরা কতটুকু রাখতে পেরেছি?আমরা স্বাধীন হয়েছি ঠিকই কিন্তু আমরা কি আদৌ মানুষ হতে পেরেছি ?পাক-হানাদারদের নারী নির্যতনের খবরে যারা অস্ত্র হাতে বীরের মত ঝাপিয়ে পড়েছিল পাকহানাদারও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে তাদের কেউ যখন দুঃখ করে বলেন,
পাশ্ববর্তী গ্রামের এক নারীকে ধর্ষনের খবর পেয়ে আমার বিবেক চিৎকার করে বলেছিল,যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষন করছে তাদের বিরুদ্ধে যদি আমি ঝাপিঁয়ে না পড়ি তাহলে আমার মাকেই অপমান করা হবে আমার বোনকে ধর্ষনের সুযোগ করে দেওয়া হবে।সেদিন বিবেকের চিৎকারে অস্ত্র হাতে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম লাখো লাখো বাঙালীর সাথে কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে।স্বাধীন করেছি দেশ অথচ সেই দেশের প্রতিদিনকার সংবাদপত্রে আমাকে কয়েকটি ধর্ষনের খবর পড়তে হয়।অপ্রিয় হলেও সত্য পাকহানাদার ও তাদের দোসররা ৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শিশু নির্যাতন করেনি বললেই চলে কিন্তু স্বাধীন দেশে ১০বছরের শিশুও ধর্ষনের স্বীকার হয়।একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটা যে আমার জন্য কতটা কষ্টের সেটা আমি বোঝাতে পারবনা।
মাস কয়েক আগে প্রতিবেশী মুক্তিযোদ্ধা আংকেলের করা প্রতিটি শব্দ যে অপ্রিয় বাস্তবতা সেটা অস্বীকার করার মত সাহসটুকু আমার ছিলনা।স্বাধীন দেশের নারী নির্যাতন এবং শিশু নির্যাতনের যে চিত্র বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উঠে আসছে প্রতিনিয়ত তা রীতিমত শিউরে উঠার মত।পুরুষের যৌন তাড়নার স্বীকার হয়ে ষোড়শী,যুবতী,তরুনীরাই শুধু নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেনা।শিশু ,কিশোরীরা পর্যন্ত নানাভাবে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে।বখাটে থেকে শুরু করে এলিট শ্রেনী ,সুশীল সমাজেও শিশু-কিশোরীরা নানাভাবে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে।বখাটেদের অত্যাচারে অপনামে আত্মহত্যা করেছ কিশোরী শাবনূর,কিশোরী আন্না,কিশোরী দোলারা।শুধু বখাটেদের অত্যাচারেই নয় বাসা বাড়িতে কাজ করতে গিয়েও শিশুরা অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।নির্যাতিত শিশুদের যন্ত্রনার চিৎকারে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে।
পুলিশ ও মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী শিশু ও নারী গৃহকর্মী নির্যাতন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, সচিব, পুলিশ ও সামরিক কর্মকর্তা, ডাক্তার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী এবং চিত্র নায়িকার বাড়িতেও ঘটেছে গৃহকর্মী নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা।পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ সালে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৪২৯ শিশু। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ৩৯১ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। তবে বেসরকারি হিসাবে শিশু নির্যাতনের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্যা অনুযায়ী,গত পাচঁ বছরে ৩৯৩টি শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনে মারা গেছে। অত্যাচার সইতে না পেরে কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছে।
যে শিশুগুলোর মায়ের বুকে মাথা রেখে গল্প শুনে ঘুমিয়ে পড়ার বয়স সে শিশুগুলো সামর্থ্যবানদের বাসায় গাধার খাটুনি খাটতে কেন আসে?কারণ,রাষ্ট্র ওদের বেচেঁ থাকার মৌলিক চাহিদাগুলো পূরনে ব্যর্থ হয়েছে।তাই ওরা আমাদের বাসায় কাজ করতে আসে।আমরা যদি তাদের সাথে হিংস পশুর মত আচরণ করি তাহলে তারাঁ কোথায় যাবে?কিভাবে ওরা দুমুঠো খেয়ে বেচেঁ থাকবে?
মানছি ওরা ছোট-খাট অপরাধ করে।কিন্তু ওদের অপরাধগুলো কি ক্ষমার অযোগ্য?রাষ্ট যেখানে অপরাধী,রাষ্ট্রের ক্ষমতাবানরা যেখানে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে ,আমরা যেখানে অফিসে বসে ঘুসে খেয়ে বাসায় ফিরি,আমরা যেখানে প্রতিনিয়ত অন্যায় করছি শিক্ষিত হয়েও সেখানে এই শিশুগুলো বড়ই নিষ্পাপ।ওরা পেটের দায়ে ছোট-খাট অপরাধ করে।ওরা ফ্রিজ থেকে একটি মিষ্টি কিংবা একটি ফল খেলে ওদের উপর হায়েনার মত ঝাপিঁয়ে পড়বেননা প্লিজ।কখোন কি ভেবে দেখেছেন আপনার ৮কিংবা ১০ কিংবা ১২বছরের শিশুটিও ক্ষুদা লাগলে আপনাকে না জানিয়ে ফ্রিজ থেকে নিয়ে খেয়ে ফেলে।ওদের বয়স হয়নি বোঝার।ওদের যদি আদর,মমতা,স্নেহ ,ভালবাসা দিতে পারি তাহলে ওরা অপরাধ করবেনা।ওদের পরিবারের সদস্য ভাবতে দোষ কি?আমি আমাদের কাজের মেয়ে রিনাকে (রিনাকে সব সময় আমরা খালাতবোন পরিচয় দিয়ে আসছি) দিয়ে দেখেছি ওকে খেতে ডাকলে ও সবার আগে বলবে,দুই ভাইয়া কি খেয়েছে?আমাদের দুই ভাই ১বোনের জন্য ও আম্মুর সাথে ঝগড়া করে আম্মুকে বলে,খালাম্ম,আপনি শুধু শুধু ভাইয়া আর আপুদেব বকা দেন।এককাপ চা চাইলে রাত তিনটায় হলেও রিনা না করেনা।কারণ,আমরা রিনাকে কখনো কাজের মেয়ে হিসেবে দেখিনি আমাদের পরিবারের একজনের মতই দেখে এসেছি।
যারা তাজা প্রাণের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়ে গিয়েছে তাদের নিয়ে যারা ৪০বছর ধরে ব্যবসা করে আসছে তাদের স্বীকার এইসব শিশুরা।ওদের বোঝার বয়স হয়নি পাপ-পূন্য।প্লিজ আপনার সন্তানটির মতই এসব শিশুদের ক্ষমা করে আদর ভালবাসা দিয়ে ওদের বেচেঁ থাকতে দিন।
তথ্যসূত্র ও ছবিঃ আমার দেশ,যুগান্তর